Home / জাতীয় খবর / শিবু সোরেন: ঝাড়খণ্ড আন্দোলনের অগ্রদূতের বিদায়

শিবু সোরেন: ঝাড়খণ্ড আন্দোলনের অগ্রদূতের বিদায়

20250804 160752

৪ঠা আগস্ট, ২০২৫। এই দিনটি ঝাড়খণ্ডের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি দুঃখজনক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। এই দিন সকালে, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার (JMM) প্রতিষ্ঠাতা এবং রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবু সোরেন দিল্লির গঙ্গা রাম হাসপাতালে ৮১ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দীর্ঘদিন ধরে কিডনি রোগ এবং সাম্প্রতিক মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের মতো জটিল স্বাস্থ্য সমস্যার সঙ্গে লড়াই করার পর তিনি জীবনযুদ্ধে পরাজিত হন। তাঁর মৃত্যু কেবল ঝাড়খণ্ডের রাজনীতিই নয়, ভারতের আঞ্চলিক রাজনৈতিক আন্দোলনের ক্ষেত্রেও একটি অপূরণীয় ক্ষতি।

শিবু সোরেনের জীবন: একটি সংগ্রামী অধ্যায়

শিবু সোরেন, যিনি ‘দিশোম গুরু’ নামে পরিচিত, ঝাড়খণ্ড আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা আদিবাসী সম্প্রদায়ের অধিকার, পরিচয় এবং স্বায়ত্তশাসনের জন্য একটি শক্তিশালী কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠে। ১৯৭০-এর দশকে শুরু হওয়া তাঁর আন্দোলন ঝাড়খণ্ডকে পৃথক রাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত করে, যা ২০০০ সালে বাস্তবায়িত হয়। তিনি শুধু একজন রাজনীতিবিদই ছিলেন না, বরং আদিবাসী সমাজের কল্যাণে নিবেদিত একজন সমাজসেবীও ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে JMM রাজ্যের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

শিবু সোরেন তিনবার ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর রাজনৈতিক জীবন ছিল বিতর্ক এবং সাফল্যের মিশ্রণ। তিনি আদিবাসী অধিকারের পক্ষে সোচ্চার থাকলেও, তাঁর কর্মজীবনে বেশ কিছু বিতর্কও তাঁর পিছু নিয়েছিল। তবুও, তাঁর অবদান ঝাড়খণ্ডের মানুষের কাছে অমলিন থাকবে।

শিবু সোরেন মৃত্যুদিবস

শেষ দিনগুলো: স্বাস্থ্যগত সংগ্রাম

শিবু সোরেন গত কয়েক মাস ধরে গুরুতর অসুস্থ ছিলেন। কিডনি রোগের পাশাপাশি তাঁর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের সমস্যা দেখা দেয়। গত ১৯ জুন, ২০২৫ তারিখে তাঁকে দিল্লির গঙ্গা রাম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে তাঁর চিকিৎসা চললেও, তাঁর শারীরিক অবস্থা ক্রমশ অবনতি হতে থাকে। শেষ পর্যায়ে তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। তাঁর মৃত্যুতে ঝাড়খণ্ডের রাজনীতি একটি শক্তিশালী স্তম্ভ হারালো।

ঝাড়খণ্ডের রাজনীতিতে শিবু সোরেনের প্রভাব

শিবু সোরেনের মৃত্যু কেবল JMM-এর জন্যই নয়, সমগ্র ঝাড়খণ্ডের রাজনীতির জন্য একটি বড় ধাক্কা। তিনি ছিলেন এমন একজন নেতা, যিনি আদিবাসী সম্প্রদায়ের অধিকারের জন্য সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত JMM আজও রাজ্যের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাঁর পুত্র, হেমন্ত সোরেন, বর্তমানে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, যা শিবু সোরেনের রাজনৈতিক উত্তরাধিকারের প্রমাণ।

তবে, শিবু সোরেনের অনুপস্থিতিতে JMM-এর ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন। তাঁর নেতৃত্বের অভাবে দলের অভ্যন্তরীণ ঐক্য এবং আদিবাসী অধিকারের প্রশ্নে তাঁর মতো শক্তিশালী কণ্ঠস্বর কতটা বজায় থাকবে, তা ভবিষ্যতই বলে দেবে।

সমাজে তাঁর অবদান

শিবু সোরেন কেবল রাজনীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলেন না। তিনি আদিবাসী সম্প্রদায়ের শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কাজ করেছেন। তাঁর নেতৃত্বে ঝাড়খণ্ডে আদিবাসীদের পরিচয় এবং অধিকারের প্রশ্নটি জাতীয় পর্যায়ে গুরুত্ব পায়। তিনি সাধারণ মানুষের কাছে ছিলেন একজন নেতা, যিনি তাদের দুঃখ-কষ্ট বুঝতেন এবং তাদের পক্ষে লড়াই করতেন।

উপসংহার

শিবু সোরেনের মৃত্যু ঝাড়খণ্ডের জন্য একটি যুগের অবসান। তাঁর জীবন ছিল সংগ্রাম, ত্যাগ এবং নেতৃত্বের এক অসাধারণ গল্প। তিনি ঝাড়খণ্ডের মানুষের কাছে চিরকাল একজন প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন। তাঁর অবদান এবং ত্যাগ কখনো ভোলার নয়। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি

Tagged:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *