ভূমিকা: বৈশ্বিক সমালোচনার প্রেক্ষাপট
২৪শে জুলাই, ২০২৪ – মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ একটি বিস্ফোরক পোস্ট শেয়ার করেন:
“ভারত ও রাশিয়া তাদের অর্থনৈতিক নীতির কারণে প্রায় মৃত… উচ্চ শুল্কের কারণে আমেরিকার সাথে তাদের বাণিজ্য প্রায় শূন্যের কোঠায়।”[সূত্র: Bloomberg, 24/07/2024]
এই মন্তব্য এর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় স্টর্ম তৈরি করে। এর প্রেক্ষাপটে, ২৬শে জুলাই, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর লোকসভা কেন্দ্র বারাণসীতে সরাসরি জবাব দেন – শুধু ট্রাম্পের দাবি খণ্ডন নয়, ভারতের অর্থনৈতিক ভিশনের একটি রোডম্যাপ উপস্থাপন করেন।
অধ্যায় ১: মোদীর জবাব – শুধু প্রতিবাদ নয়, পরিসংখ্যানের ভাষ্য
প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর ভাষণে পরিসংখ্যান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার মাধ্যমে ট্রাম্পের দাবিকে চ্যালেঞ্জ করেন:
লক্ষ্যের উচ্চতা:
“আমরা ২০২৭ সালের মধ্যে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হওয়ার পথে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগোচ্ছি,” বলেছেন মোদী।
IMF-এর সর্বশেষ প্রতিবেদন (এপ্রিল ২০২৫) অনুযায়ী, ভারত বর্তমানে জাপানকে পেছনে ফেলে চতুর্থ স্থানে রয়েছে, যার জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭.৮% ।
স্বার্থের সুরক্ষা:
তিনি জোর দিয়ে বলেন,
“বৈশ্বিক চাপ বা সমালোচনা যাই আসুক, ভারত কখনোই নিজের অর্থনৈতিক স্বার্থ বিসর্জন দেবে না।” বিশেষ করে রপ্তানি নীতি, ডিজিটাল অর্থনীতি এবং জ্বালানি নিরাপত্তায় এই নীতি প্রয়োগ করা হবে।
অধ্যায় ২: ‘স্বদেশী’ – শব্দ নয়, অর্থনৈতিক যুদ্ধের হাতিয়ার
মোদীর ভাষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিল অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির শক্তিকরণ এবং নাগরিকদের দায়িত্ববোধ:
অগ্রাধিকারের খাত: সরকারের নীতিনির্ধারণে কৃষক, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (MSMEs) এবং যুব কর্মসংস্থান সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবে। ২০২৪-২৫ সালের বাজেটে এ খাতে ১.৭৫ লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
বিপ্লবের আহ্বান: মোদী সরাসরি দেশবাসীকে বলেন,
“যে পণ্য ভারতীয় হাতে তৈরি, শুধু তাই কিনুন। প্রতিটি স্থানীয় পণ্যের পিছনে একজন কৃষক, একজন কারিগর বা একজন তরুণ উদ্যোক্তার স্বপ্ন লুকিয়ে আছে।
“তিনি এটিকে “অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সংগ্রাম” আখ্যা দেন ।
রাজনৈতিক ঐক্যের আবেদন: “যারা ভারতকে বিশ্বমঞ্চে শীর্ষে দেখতে চান, তাদের রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে ‘স্বদেশী অঙ্গীকার’-এএকাত্ম হতে হবে,” যোগ করেন তিনি।
ট্রাম্পের সমালোচনা: প্রেক্ষাপট ও প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্পের মন্তব্যের পিছনে রয়েছে বেশ কয়েকটি তাৎক্ষণিক ঘটনা:
- শুল্ক যুদ্ধের ইতিহাস:২০১৯ সালে ভারত, মার্কিন পণ্যে (আপেল, বাদাম) শুল্ক বাড়ালে ট্রাম্প ভারতকে “শুল্ক রাজা” অভিহিত করেন। বর্তমানে ভারত-মার্কিন বাণিজ্য ঘাটতি ৪৫ বিলিয়ন ডলার, যা ট্রাম্পের সমালোচনার মূল কারণ
- ভূ-রাজনৈতিক চাপ: ভারত-রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান তেল ও প্রতিরক্ষা বাণিজ্য (২০২৪ সালে ৬৫ বিলিয়ন ডলার) পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য উদ্বেগের বিষয় ।
উপসংহার: শুধু প্রতিক্রিয়া নয়, রূপান্তরের ডাক
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য কেবল ট্রাম্পের সমালোচনার জবাব নয়, বরং “আত্মনির্ভর ভারত ২.০”-এর ভিত্তি স্থাপন করেছে:
- সার্বভৌমত্বের সংজ্ঞা:বৈদেশিক চাপে নয়, স্থানীয় উদ্ভাবন ও উৎপাদনের মাধ্যমে অর্থনীতি চালানোই প্রকৃত স্বাধীনতা
- নাগরিকের ভূমিকা: “স্বদেশী শুধু নীতি নয়, জাতীয় চেতনার অঙ্গ,” বলে মোদী জোর দেন। Make in India, ডিজিটাল ইন্ডিয়া এবং স্টার্টআপ ইন্ডিয়ার মতো উদ্যোগগুলো এরই ধারাবাহিকতা।
- ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি:২০৩০ সালের মধ্যে ভারতকে একটি $১০ ট্রিলিয়ন অর্থনীতিতে পরিণত করার লক্ষ্যে স্থানীয় শিল্প, সবুজ প্রযুক্তি এবং মানবসম্পদ বিনিয়োগে জোর দেওয়া হবে।
মূল বার্তা:”আমাদের অর্থনীতি মৃত নয়—এটি স্বদেশীর প্রাণে নতুনভাবে জেগে উঠছে।