Home / জাতীয় খবর / ক্ষমতার উত্তরাধিকার থেকে কারাগারে: প্রজ্বল রেভান্নার যাবজ্জীবন সাজার পূর্ণাঙ্গ কাহিনী

ক্ষমতার উত্তরাধিকার থেকে কারাগারে: প্রজ্বল রেভান্নার যাবজ্জীবন সাজার পূর্ণাঙ্গ কাহিনী

1754134561 prajwal

কর্ণাটকের একটি বিশেষ আদালত দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি তাৎপর্যপূর্ণ রায় দিয়েছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ.ডি. দেবগৌড়ার নাতি ও বিতর্কিত রাজনীতিবিদ প্রজ্বল রেভান্নাকে এক কর্মীকে বারংবার ধর্ষণের অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। গত শনিবার (২রা আগস্ট) ঘোষিত এই রায়ের পাশাপাশি আদালত তাঁকে ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা ও করেন, যা না দিলে আরও ৩ বছর সাজা বৃদ্ধির নির্দেশ রয়েছে। বিচারক সন্তোষ গজানম ভাটের এই সিদ্ধান্তের আগের দিনই রেভান্নাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।

ঘটনার বিস্তৃত বিবরণ

অভিযোগপত্র ও তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের এক ভয়াবহ ঘটনায় হাসান জেলার একটি বিলাসবহুল খামারবাড়িতে এক গৃহকর্মীকে চার দিন আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। শুধু ধর্ষণই নয়, রেভান্না অভিযোগভুক্ত সময়ে মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করে ভুক্তভোগীকে ভবিষ্যতে চুপ থাকতে বাধ্য করেন। কর্ণাটক পুলিশের গঠিত বিশেষ তদন্ত দল (SIT) ৫ মাস ধরে তদন্ত চালিয়ে এপ্রিল ২০২৫-এ ৫০০ পৃষ্ঠার চার্জশিট জমা দেয়, যাতে ফরেনসিক প্রমাণ, সিসি ক্যামেরা ফুটেজ ও সাক্ষীর বক্তব্য অন্তর্ভুক্ত ছিল।

রাজনৈতিক উত্থান-পতনের মোড়

এই মামলার পটভূমি জড়িয়ে আছে রাজনীতির সঙ্গে:
– ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে রেভান্না জেডি(এস) দলের প্রার্থী হিসেবে হাসন আসনে লড়ছিলেন।
– ভোটের মাত্র ৭২ ঘণ্টা আগে একটি পেনড্রাইভে ভিডিও ফাঁস  হয়, যাতে তাকে একাধিক নারীর সঙ্গে যৌন সহিংসতায় জড়িত দেখা যায়।
– ভিডিও ভাইরাল হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দল থেকে বহিষ্কার হন তিনি, যদিও তখনও আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের হয়নি।

Projal Reveenna মামলার সময় সূচী

আদালতে শেষ লড়াই ও বিচারকের যুক্তি

শাস্তি ঘোষণার আগে রেভান্না ২০ মিনিটের আবেগজড়িত বক্তব্যে নিজেকে ” রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার দাবি করেন:

“আমার বিরুদ্ধে ১০ জন নারীর নাম উল্লেখ করা হলেও, একজনও স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আদালতে আসেননি। সব অভিযোগ ভোটের ৬ দিন আগে পুলিশে জোর করে ধর্না দিয়ে দায়ের করানো হয়েছে… আমার দ্রুত উত্থানই আসল অপরাধ।”

তিনি ৭০ বছর বয়সী মা-বাবার দেখভালের দায়িত্বের কথা উল্লেখ করে কম সাজা চান, কিন্তু আদালত তাঁর যুক্তি নাকচ করে দেন। বিচারক তাঁর রায়ে উল্লেখ করেন:

“অপরাধটি নির্মম, পূর্বপরিকল্পিত এবং ক্ষমতার দর্প দেখানোর প্রবণতা প্রকাশ করে।”

বিচার ব্যবস্থার ইতিহাসে মাইলফলক

এই রায়ের তাৎপর্য বহুমাত্রিক:

  • প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের সদস্যের প্রথম যাবজ্জীবন সাজা।
  • SIT-এর তদন্ত পদ্ধতি আদালতে গ্রহণযোগ্যতা পেল।
  • 3. ইলেকট্রনিক প্রমাণের ভূমিকা (ভিডিও, ফোন ক্যাল লগ) চূড়ান্ত রায়ে নির্ধারক হয়।
  • জরিমানার অর্থ ভুক্তভোগীর ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়ার আদেশ।

বিশ্লেষণ: আইনি ও রাজনৈতিক প্রভাব

ধারা 376(2)(N) এর তাৎপর্য:

প্রজ্বলের সাজা ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারা ৩৭৬(২)(এন) অনুযায়ী দেওয়া হয়েছে, যা “বারংবার ধর্ষণ” বা একই শিকারকে ক্রমাগত যৌন নির্যাতনের শাস্তি হিসাবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড নির্ধারণ করে। এটি ২০১২ সালের নির্ভয়া মামলার পর সংশোধিত কঠোর ধর্ষণ আইনের প্রতিফলন। 
আপিলের সম্ভাবনা: 
রেভান্নার আইনি দল কর্ণাটক হাইকোর্টে আপিল করার পরিকল্পনা করেছে বলে খবর।                                                                    বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন: 

“চার্জশিটে জমা হওয়া ডিজিটাল প্রমাণ (ভিডিও, ফোন কলে অবস্থান ট্র্যাকিং) ও ১২ জন সাক্ষীর জবানবন্দী এতই জোরালো যে, আপিলে রায় উল্টানো প্রায় অসম্ভব— ড. মীনাক্ষী শর্মা, ফৌজদারি আইন বিশ্লেষক।

সমাজের জন্য বার্তা

বিচারক তাঁর রায়ে জোর দেন: “কোনো ব্যক্তির রাজনৈতিক বা সামাজিক অবস্থান আইনের ঊর্ধ্বে নয়”।বিশেষজ্ঞরা একে নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় শূন্য সহিষ্ণুতার স্পষ্ট সংকেত বলে ব্যাখ্যা করছেন।

আপনার মতে, ক্ষমতাবানদের বিচারের এই রায় ভারতে ন্যায়বিচারের ইতিহাসে কতটা বদল আনবে?

Tagged:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *